Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

 


রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরাপত্তা ঝুঁকিতে

পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লির প্রতি নতজানু নীতি ও কূটনৈতিক নমনীয়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পুরোপুরি ভারতীয় বলয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। প্রকল্পটি রাশিয়ার সহায়তায় বাস্তবায়ন হলেও ভারত কৌশলগত ও প্রযুক্তিগতভাবে সুবিধা এবং স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।

সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভারতের বিশেষ একটি সংস্থার কাছে তথ্য পাচারের। এই প্রকল্পে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট চক্র অনিশ্চয়তায় ফেলেছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।

প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে ভারতের পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (এআরবি) এবং বাংলাদেশের পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরবি) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে পারমাণবিক নিরাপত্তা, বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ, যৌথ প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় ও গবেষণা সহযোগিতার কথা বলা হলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আড়ালে ভারত রূপপুর প্রকল্পের স্পর্শকাতর নকশা, লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছেÑযা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি মূলত রাশিয়ার সহায়তায় বাস্তবায়িত হলেও ভারত যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তা প্রকল্পের প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণে ভারতের আধিপত্য নিশ্চিত করছে। চুক্তির আওতায় তথ্য, উপকরণ, যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি বিনিময় করা হবে। এছাড়া যৌথ কমিটি, বৈজ্ঞানিক সভা, কর্মশালা, সিম্পোজিয়াম এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভারতের কর্মীরা সরাসরি প্রকল্পের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও পর্যায়ক্রমিক তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছেন।

চুক্তির ধারা অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষত রূপপুর প্রকল্পের তথ্য, নকশা, উপকরণ ও যন্ত্রপাতি-সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করবে। রূপপুর প্রকল্পের স্পর্শকাতর তথ্য, ফুয়েল ফ্যাব্রিকেশন যন্ত্রপাতি, কুল্যান্ট পাম্প, জিরকোনিয়াম টিউবিং ও অন্যান্য উপকরণ ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে পৌঁছাবে। তথ্য বিনিময় এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক এবং অপারেশনাল প্রক্রিয়ার অন্তর্দৃষ্টি পাবেÑযা কৌশলগত সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।

তিনটি চুক্তির মধ্যে রয়েছে এইআরবি-বিএইআরবি টেকনিক্যাল ইনফরমেশন শেয়ারিং চুক্তি, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কিত সহযোগিতা চুক্তি এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণে তথ্য বিনিময় চুক্তি। এসব চুক্তি ভারতকে বাংলাদেশের পারমাণবিক অবকাঠামোর প্রায় প্রতিটি স্তরে প্রভাবিত করার সুযোগ দিচ্ছে। তথ্য, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রক অভিজ্ঞতার বিনিময় ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত করছে।

চুক্তিগুলোতে যদিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, সব উপকরণ ও তথ্য শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে; কিন্তু বাস্তবে তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ভারতের পারমাণবিক দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত প্রভাব বৃদ্ধি করছে। যৌথ গবেষণা, কর্মশালা, সিম্পোজিয়াম এবং বিশেষজ্ঞদের বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশি প্রকল্পের প্রযুক্তিগত সূক্ষ্মতা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে পরিচিত হচ্ছে।

চুক্তিগুলো ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত এবং প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের জন্য কার্যকর। চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে অন্তত ১২ মাসের লিখিত নোটিস প্রয়োজন। তবে গোপনীয়তা, তথ্য সুরক্ষা ও মেধাস্বত্ব-সংক্রান্ত শর্তাবলি চুক্তি শেষ হলেও কার্যকর থাকবে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, চুক্তিগুলো কেবল নিরাপত্তা বা প্রশিক্ষণের জন্য নয়; বরং ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত করছে। তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ভারতের পারমাণবিক দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত প্রভাব বৃদ্ধি করছে।

এমডি নিয়োগ হয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই

২০২৫ সালের ২৭ মে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্মারক অনুযায়ী ড. জাহেদুলকে ৩০ মে অবসরে পাঠানো হয় এবং ৩১ মে থেকে অবসর-উত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করা হয়। অথচ তার আগেই ২৮ মে তাকে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয় সব সরকারি সুবিধা বহাল রেখেই।

কিন্তু সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ (ধারা ৪৯) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সার্ভিস বিধিমালা-১৯৮৫ (ধারা ৪৬) অনুযায়ী এ ধরনের নিয়োগ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়। অথচ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না নিয়েই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আইনের অপব্যবহার

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই গোপনে পরিচালিত হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন নিয়ম ভেঙে জাহেদুলকে বাঁচাতে ওঠেপড়ে লাগেন বলে প্রকল্পের অনেকে অভিযোগ করেছেন। কমিশনের চেয়ারম্যান বারবার জানান, পিআরএল স্থগিত করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তবুও সচিব সরাসরি হুমকি দেন, ‘চেয়ারম্যান যেহেতু চলতি দায়িত্বে আছেন, তাই যেকোনো সময় সরিয়ে দেওয়া সম্ভব।’

অবশেষে ২০২৫ সালের ৭ জুলাই পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে দিয়ে ভূতাপেক্ষভাবে জাহেদুলের পিআরএল স্থগিত করানো হয়, যা বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

পরিকল্পিত নীলনকশার ঘটনাক্রম

ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখলে বোঝা যায়, জাহেদুলকে টিকিয়ে রাখার জন্য একের পর এক পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের ৭ মে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নতুন প্রকল্প পরিচালকের নাম চায়। জাহেদুলকে বাদ দিয়েই কমিশন চারজনের নাম পাঠায়। ৮ মে জাহেদুলকে বাঁচাতে প্রথমবারের মতো এনপিসিবিএলে এমডি পদে আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ১৫ মে প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান (যিনি জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য), তাকে হঠাৎ প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২৫ মে সিনিয়রিটি ভেঙে ড. কবির হোসেনকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়, যিনি দক্ষতার অভাবে বিতর্কিত। ২৭ মে জাহেদুলের পিআরএল মঞ্জুর হয়। ২৮ মে পিআরএল বাতিল না করেই তাকে এমডি পদে বসানো হয়। ১ জুন অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস হয়। ৩০ জুন সচিবের চাপে কমিশনকে জাহেদুলের পিআরএল বাতিলের নির্দেশ দিতে হয়। ৭ জুলাই জাহেদুলের পিআরএল ভূতাপেক্ষভাবে স্থগিত হয়।

অভিযোগের পাহাড়

ড. জাহেদুল হাছানের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়াবহ অভিযোগের তালিকা। প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতি ও আত্মসাৎ, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার, প্রকল্প পরিচালনায় ব্যাপক অনিয়ম-ব্যর্থতা, এমনকি এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিই এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যেন কেবল জাহেদুলই যোগ্য হন। নন-টেকনিক্যাল ও পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই কমিটি দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের একাংশ এরই মধ্যে জাহেদুলের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি প্রকল্পের স্বার্থে কাজ করছেন না, বরং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স তুলে দেওয়ার গোপন পাঁয়তারা করছেন।

এদিকে জাহেদুল হাছান টিকে থাকার জন্য নভেম্বরে রিঅ্যাক্টরে ফুয়েল লোড করিয়ে ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ করাতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ আইএইএর পরামর্শ অনুযায়ী কিছুতেই এখন ফুয়েল লোড করা যাবে না। আরও কিছু টেস্ট শেষ করে তারপর ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ করতে হবে।

তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে ‘যোগ্য’ ও ‘সৎ’ দাবি করেছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান।

জাহেদুল সিন্ডিকেটের মূল ক্রীড়নক অলক

জাহেদুলের সঙ্গে মিলেমিশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে গেছেন আরেক কর্মকর্তা অলক চক্রবর্তী। পারমাণবিক কেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অলক চক্রবর্তী প্রকল্পকে বিদেশি স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে নিয়োগ না দিয়ে মূলত প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছে ড. জাহেদুল ও অলক সিন্ডিকেট।

সূত্র বলছে, প্রকল্পে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের প্রবেশ এবং তাদের তদারকির মূল সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেন অলক চক্রবর্তী। এরই ধারাবাহিকতায় রূপপুর প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে আটজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ডেপুটেশন অর্ডার ২০২২ সালের ২২ আগস্ট জারি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। এছাড়াও ২০২৪ সালের ২৭ মে আরো চারজনের আরেকটি অর্ডার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে ভারতীয়দের রূপপুর প্রকল্পে নিয়ে আসার জন্য কাজ করতেন তিনি। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এসব ভারতীয় নাগরিক টেকনিক্যালি দৃশ্যমান কোনো সহযোগিতা করতেন না। এসব ভারতীয়কে মাসিক বেতন ১১ লাখ টাকা, দৈনিক খাওয়া খরচ সাত হাজার টাকা; পাশাপাশি বাসস্থান, পরিবহন খরচ রাষ্ট্রীয় অর্থে বহন করা হলেও তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

অলকের ঘন ঘন বিদেশযাত্রা নিয়ে সন্দেহ

অলক চক্রবর্তীর ঘন ঘন ভারতসহ বিদেশযাত্রাও অনেক সন্দেহের জন্ম দেয়। একটি অফিসিয়াল নথি থেকে জানা যায়, অলক চক্রবর্তী ২০১২-২৪ সালের মধ্যে ৩২ বার বিদেশ সফর করেছেন। সবচেয়ে দীর্ঘ সফর ছিল ২০১২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তÑপুরো এক বছর ভারতে অবস্থান। এত দীর্ঘ সফরের জন্য কোনো স্পন্সরের নাম ডকুমেন্টে নেই। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিতর্ক উঠলে এই ডেটাবেসে সময় কমিয়ে ১০ দিন করা হয়। কিন্তু সেখানেও স্পন্সরশিপ উল্লেখ নেই। ২০২৩ সালের ২-২১ নভেম্বরের সফরেও স্পন্সর হিসেবে ‘অন্যান্য’ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি অস্ট্রিয়া, বেলারুশ, রাশিয়া, জাপান, বেলজিয়াম ও চীন সফর করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্পন্সর হিসেবে দেখানো হয়েছে ‘অন্যান্য’। সূত্র বলছে, প্রকল্পের একমাত্র ভারতীয় সাব-কন্ট্রাক্টর ‘পাহাড়পুর কুলিং টাওয়ার’-এর পক্ষে তিনি নিয়মিত লবিং করতেন। প্রকল্পের সব ধরনের কেনাকাটা, আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়াও অলকের নিয়ন্ত্রণে। প্রকল্প থেকে মেটাল স্ক্র্যাপ ব্যবসা তিনি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রূপপুর কাস্টমস আপত্তি তুললেও সাবেক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি।

প্রকল্পে ভারতীয়দের সার্বিক সহযোগিতা করতেন আরেক কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায়। তিনি রূপপুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন এপিসিএস অ্যান্ড ইইর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট পদে আছেন।

অভিযোগের বিষয়ে গৌতম চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ধর্মের বিচারে ‘এজেন্ট’ শোনাটা অত্যন্ত অপমানের। সার্কুলার দেখে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।’

অলকের নিয়োগে কারসাজির নেপথ্যে

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং এর প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আবেদনের সর্বশেষ তারিখ ছিল ১৯৯৯ সালের ২৫ মে। কিন্তু অলক চক্রবর্তী চাকরির দরখাস্ত দিয়েছিলেন প্রায় তিন মাস সাত দিন পর; অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের ৩১ আগস্ট। তাতে তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সুপারিশ ছিল।

চাকরির জন্য আবেদন করার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এমএ/এমএসসি/এমবিএসহ কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা অথবা দ্বিতীয় বিভাগে/শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রিসহ ১০ বছরের অভিজ্ঞতা; যার কোনোটিই অলক চক্রবর্তীর ছিল না। এছাড়াও শিক্ষার কোনো স্তরেই তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্তদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না মর্মে উল্লেখ থাকলেও অলক চক্রবর্তী এইচএসসিতে ‘পাস’ হলেও তার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল।

পতিত শেখ হাসিনা সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সবচেয়ে প্রিয় এবং কাছের মানুষ ছিলেন অলক চক্রবর্তী। একজন অযোগ্য, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ইয়াফেস ওসমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মতো উচ্চ প্রযুক্তিঘন এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করেছিলেন।

প্রকল্পের কাজ মনিটরিংয়ের জন্য ভারত থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করাই তার অন্যতম কাজ বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারত-সংশ্লিষ্টতার কারণেই অলক চক্রবর্তী প্রকল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন এবং সে কারণে সাবেক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও ড. জাহেদুল হাছান তাকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতেন। কারিগরি কোনো শিক্ষা বা যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অলক চক্রবর্তী প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কারিগরি সফরে অসংখ্যবার ইয়াফেস ওসমান ও ড. হাছানের বিদেশ সফরের সঙ্গী হয়েছেন। তিনি প্রকল্পের জন্য আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি/মালামাল খালাসের জন্য নিযুক্ত ১৭টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে সুবিধা দিয়ে উৎকোচ গ্রহণ, ইমপোর্ট পারমিট দিয়ে প্রকল্পের সাব-কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ, পার্মানেন্ট ইমপোর্ট পারমিট পরিবর্তনের জন্য প্রকল্পের সাব-কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ, এমনকি যেকোনো কাজে তার কাছে গেলেই টাকা ছাড়া কাজ করতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল শুধু ভারতীয় কোম্পানি পাহাড়পুর লিমিটেড। পাহাড়পুরের যেকোনো কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য তার ছিল তৎপরতা; পাহাড়পুরের অসমাপ্ত কাজ কমিশন কর্তৃক গ্রহণ করার জন্য তার ছিল তদবির। পাহাড়পুরের কর্তাব্যক্তিরাও ছিলেন তার অত্যন্ত অনুগত।

অভিযোগের বিষয়ে অলক চক্রবর্তীকে বার্তা দেওয়া হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো জবাব মেলেনি।

সূত্র : প্রথম আলো

Post a Comment

0 Comments