Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল, আতঙ্কে লাখো মানুষ

 

মতলব সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। ছবি : সংগৃহীত


মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল, আতঙ্কে লাখো মানুষ


মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সংযোগস্থল ‘মতলব সেতু’র মাঝখানে জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর সারা দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এখন মতলব সেতুটিও ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, সেতুর দুপাশের রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে হয়েছে বড় গর্ত। সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে পড়ছে রড। চলছে প্রতিদিন ছোট-বড় হাজার হাজার যানবাহন। চালকসহ যাত্রীরা আছে আতঙ্কে। সেতু পারাপার হচ্ছে উৎকণ্ঠার মধ্যে। সেতুটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ঘটতে পারে যে কোনো সময় বড় বিপদ।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে বড় ফাঁকা। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপতে থাকে। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে হয়েছে বড় গর্ত। গর্ত যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারসহ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও কুমিল্লার বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় নিয়মিত যোগাযোগের জন্য এ সেতু ব্যবহার করেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে বিকল্প সড়ক না থাকায় জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সেতু নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব বাজারের পূর্বপাশে সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সেতুতে ১০.২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দু-পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১.৮৬ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে পরে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে সেতুর মাঝ দিয়ে ফাটল দেখা যাচ্ছে সম্ভবত। ভূমিকম্পের পূর্বে এরকম ছিলো না। সেতু পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাই।

গোলাম নবী খোকন বলেন, এই সেতু বন্ধ হলে আমাদের ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। সেতুর দুপাশের সড়ক এবং মাঝখানের ফাটল সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জরুরি সেবা, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে প্রতিদিন।

পথচারী কামরুল হাসান বলেন, সেতুর উত্তর পাশের রাস্তার বেহাল দশা। এই রাস্তাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলে সেতু থেকেও কোনো লাভ নাই। অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।

কলেজ শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, সেতুর অবস্থা খুবই ভয়ংকর। আমরা জানি না কখন কী ঘটে। তারপরও জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন পার হতে হচ্ছে।

স্কুলশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, প্রতিদিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার হলে কাঁপতে থাকে। ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলছে লাখো মানুষ।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নিরাপদ সড়ক চাই-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাবু বলেন, এই মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার। সেতুর দুপাশের রাস্তার বেহাল দশা। সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা সেতুর ফাটল না। সেতুর এক্সপানশান জয়েন্ট টেম্পারেচারের কারণে ফাঁকা হয়ে গেছে। অতি দ্রুত সংস্কার করা হবে। আর সংযোগ রাস্তায় গর্ত মেরামত কাজ চলছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল এবং সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ঘটনাস্থলে প্রকৌশলী পাঠানো হচ্ছে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য।

সূত্র : কালবেলা

Post a Comment

0 Comments