Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গাজাকে নতুন করে নির্মাণ নিয়ে কী বলছেন ট্রাম্প

ছবি : সংগৃহীত
 

গাজাকে নতুন করে নির্মাণ নিয়ে কী বলছেন ট্রাম্প



দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, ধ্বংস আর মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে শান্তির আলো দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে এবার সেই বিধ্বস্ত ভূমিকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল মিসরের লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত ‘গাজা শান্তি সম্মেলনে’ তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি। এক ভয়াবহ ও যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি— উভয় জনগণের জন্যই এটি আশীর্বাদস্বরূপ।’

এই সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যতটা পরিশ্রম ও ধৈর্য লেগেছে, তা তিন হাজার বছরের প্রচেষ্টার সমান। আমি জীবনে অনেক বড় সমস্যা সমাধান করেছি, কিন্তু এই সংঘাতের সমাপ্তি ছিল একেবারে আলাদা ও কঠিন। অবশেষে আমরা শান্তির পথে পৌঁছাতে পেরেছি।”

ট্রাম্প জানান, এখন গাজাকে পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের সময় এসেছে। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নতুন করে গাজাকে গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করছি খুব দ্রুতই সেই কাজ শুরু হবে, বলেন তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় ১,২০০ জন মানুষ এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা টানা দুই বছর ধরে চলে।

জাতিসংঘের হিসাবে, এই অভিযানে নিহত হয়েছে অন্তত ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই দুই বছরে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির চেষ্টা হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। হামাস কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিলেও, বেশিরভাগ সময়ই যুদ্ধ আবার শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাস সম্মতি জানায়। এরপর ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হয় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি।

এই শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ১৩ অক্টোবর হামাস তাদের হাতে থাকা শেষ ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েল কারাগার থেকে ৩ হাজার ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।

জিম্মি বিনিময়ের দিনই শারম আল শেখে আয়োজিত হয় ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’। সেখানে ট্রাম্প ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয়, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক ম্যাৎর্স, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ অন্তত ২০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।

ট্রাম্পের ভাষণে এক ধরনের স্বস্তি ও আশার সুর ছিল। তিনি বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই—গাজাকে আবার জীবিত করে তোলা। ধ্বংস নয়, সৃষ্টির পথে হাঁটা। আমি বিশ্বাস করি, শান্তির এই যাত্রা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন অধ্যায় হয়ে উঠবে।


Post a Comment

0 Comments