হিটলারের মৃত্যুর পর তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কে পেয়েছিল?
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল হিটলারের আত্মহননের পর তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির কী হয়েছিল, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি রহস্য ছিল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তদন্তে অবশেষে সেই রহস্যের জট খুলেছে। জানা গেছে, হিটলারের মৃত্যুর পর তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না, বরং তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য অনুসারে, হিটলারের মৃত্যুর পর তার ব্যক্তিগত সচিব মার্টিন বোরম্যানের প্রেস সেক্রেটারি হাইনজ লরেঞ্জের কাছ থেকে একটি উইলনামা উদ্ধার করা হয়।
যৌথ গোয়েন্দা কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন প্রহরী লরেঞ্জকে আটকে তার কাঁধে হাত রাখেন, তখনই তার কাপড়ের ভেতর লুকানো কিছু কাগজপত্র ধরা পড়ে। সেগুলো ছিল হিটলারের ব্যক্তিগত সচিব মার্টিন বোরম্যানের নির্দেশে বার্লিন থেকে পাচার করার জন্য লরেঞ্জের হাতে দেওয়া নথি।
২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে রথম্যান জানান, তাকে ও তার চার সহকর্মীকে এসব নথি অত্যন্ত গোপনে অনুবাদ করতে দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়—পাঁচজন অনুবাদকই ছিলেন ইহুদি।
ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে চাওয়া এক ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা ও চিন্তা-ভাবনা পড়া তাদের জন্য ছিল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
১৯৪৫ সালের ২৯শে এপ্রিল ভোর ৪টায় হিটলার তার রাজনৈতিক উইলের পাশাপাশি আলাদা এক কাগজে স্বাক্ষর করেন। এখানে তিনি তার জীবন, লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ সরকারের কাঠামোর কথা লেখেন। ইহুদিদের প্রতি তার ঘৃণা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে এই নথিতে।
তবে তার উইলে সম্পদ নিয়ে উল্লেখ ছিল খুব সামান্য—
‘আমার যা কিছু আছে এবং যদি এর কোনো মূল্য থাকে, তবে সব দলের কাছে যাবে। যদি দল আর না থাকে তবে সরকারের কাছে যাবে। আর যদি সরকারও ধ্বংস হয়ে যায়, তবে আমার সিদ্ধান্তের কোনো প্রয়োজন নেই।’
চিত্রকর্মের সংগ্রহ নিয়েও তিনি জোর দিয়ে লেখেন—এগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, বরং জন্মশহর লিনৎসে একটি গ্যালারির জন্য সংরক্ষিত।
নিজেকে সব সময় মিতব্যয়ী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতেন হিটলার।
জনসমক্ষে তার জীবনযাপনও ছিল তুলনামূলক সাদামাটা। কিন্তু গবেষণা প্রমাণ করে—এটা ছিল কেবল এক আবরণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ভিয়েনায় দারিদ্র্য ও কষ্টের কাহিনি শোনালেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত তিনি ইউরোপের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন।
২০০৫ সালে গবেষক ক্রিস হুইটন হিটলারের আয়ের উৎস ও সম্পদ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। সেখানে দেখা যায়—হিটলারের ছবি সম্বলিত টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে নানা অনুদান তাঁর সম্পদের বিশাল অংশ তৈরি করেছিল।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিলিয়নেয়ার
১৯৪৫ সালের ২৪শে এপ্রিল—মৃত্যুর মাত্র ছয় দিন আগে পর্যন্ত হিটলারকে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী মানুষ হিসেবে ধরা হয়। গবেষকরা অনুমান করেছেন, ২০০৩ সালের ইউরো মান অনুযায়ী তার সম্পদ দাঁড়ায় প্রায় ১.৩৫ বিলিয়ন থেকে ৪৩.৫ বিলিয়ন পর্যন্ত। ডলার ও পাউন্ডে হিসাব করলে অঙ্কটি আরো বেশি হতো। তবে তাঁর সম্পদের সঠিক হিসাব পাওয়া সব সময়ই কঠিন ছিল। কারণ নথিপত্রের অভাব, গোপন অ্যাকাউন্ট আর অদৃশ্য সম্পদ। পরবর্তীতে মার্কিন গোয়েন্দারা তার নামে কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পান, যেখানে শুধু অর্থের পরিমাণই ছিল প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার।
সাম্প্রতিক সময়েও সুইজারল্যান্ডে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে, যেগুলো হিটলারের বলে ধারণা করা হয়। এতে পরিষ্কার হয়—হিটলারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আজও রহস্য ঘন হয়ে আছে।
সূত্র : কালের কন্ঠ
0 Comments